আপনার কি মনে হচ্ছে যে, সময়ের সাথে সাথে আপনার স্মার্টফোন স্লো হয়ে গেছে? ভাবছেন যখন ফোনটি নতুন কিনেছিলেন তখনতো অনেক ভালো কাজ করত এবং অনেক বেশি ফাস্ট ছিল। কিন্তু ধিরে ধিরে এর কর্মদক্ষতা কমে যাচ্ছে কেমন করে? যদি এই ধরনের প্রশ্ন আপনাকে পেরেশান করে রাখে তবে আর চিন্তা করার দরকার নেয়। কেনোনা আজ আমি সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে চলেছি। হাঁ বন্ধুরা, আজ আপনারা জানবেন যে ঠিক কি কারণে আপনার স্মার্টফোনটি ধিরে ধিরে স্লো হয়ে গেছে বা যাচ্ছে। এবং সাথে বোনাস হিসেবে এটাও বলবো যে কি ভাবে আপনার ফোনটিকে স্লো হওয়া থেকে রক্ষা করবেন, এবং যদি ইতিমধ্যে সুপার স্লো হয়ে গিয়ে থাকে তবে কীভাবে ফাস্ট করবেন। তো চলুন শুরু করা যাক।
হাঁ বন্ধুরা, আপনার স্মার্টফোন স্লো হওয়ার পেছনে সবচাইতে বড় কারন হলো ত্রুটিপূর্ণ সফটওয়্যার আপডেট। আপনার ফোনটির নির্মাতা কোম্পানি আপনাকে নিয়মিত OTA আপডেটস দিতে থাকে। OTA আপডেটস এর মাধ্যমে আপনি আপনার ফোনের সিস্টেমকে আপগ্রেড করতে পারেন। যেমনঃ কিটক্যাট থেকে ললিপপ এ যেতে পারেন অথবা ললিপপ থেকে মার্সম্যালো তে আপগ্রেড করতে পারেন। অনেক সময় দেখা যায় আপনার ফোনকে লেটেস্ট ভার্সনে আপগ্রেড করার পরে ফোনটি স্লো হয়ে গেছে। কেনোনা অনেক সময় এই নতুন আপডেটটি আপনার ফোনের জন্য নিখুত হয় না। আবার হয়তো আপনার ফোন কোম্পানিটি অনেক দ্রুত আপডেট দিতে গিয়ে সিস্টেম আপডেটে অনেক ত্রুটি রেখে দেয়।
প্রতিকারঃ
এখানে আমার মতামত এটা যে, আপনি যদি আপনার ফোনের কর্মক্ষমতা নিয়ে সন্তুষ্ট হোন কিংবা যদি লক্ষ্য করেন, যে নতুন আপডেটস আপনি পাবেন তাতে তেমন নতুন কোনো ফিচার নেয়, তবে আপনার ফোনটিকে আপডেট করা থেকে বিরত থাকুন। আপনি কিছু দিন দেরি করতে পারেন, এমনটা করবেন না যে আপডেটস চলে আসলো আর সাথে সাথে আপডেট করা শুরু করে দিলেন। আপডেট করার আগে আপনি ইন্টারনেট এ এর আপডেট রিভিউ চেক করতে পারেন। সেখানে দেখুন তারা কি বলছেন। নতুন আপডেটে নতুন কোনো ফিচার থাকছে কি না। আপডেট করার পরে ব্যাটারি লাইফ এর অবস্থা কেমন যাচ্ছে, ফোনটি গরম হচ্ছে কি না, ইত্যাদি সব কিছু জেনে নিন। আপনি রিভিউ পড়ার পরে সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট হয়ে গেলে তবেই আপনার ফোনটিকে আপডেট দিতে পারেন। আর সন্তুষ্ট না হলে আপডেট করার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি আপনার ফোনটিকে এমনিতেই ব্যবহার করতে পারেন, কেনোনা সেটা ভালো চলছে।
অ্যাপ্লিকেশানস আপডেটঃ
দেখুন আপনি যখন আপনার ফোনে কোনো অ্যাপ্লিকেশান ইন্সটল করেন, তখন প্লে স্টোর থেকে সেই অ্যাপ্লিকেশান গুলোর আপডেট করতে বলা হয় (যদি আপডেট পাওয়া যায়)। অ্যাপ্লিকেশানস এর নির্মাতাগণ এবং এর উন্নয়নকারীগন যখন দেখেন যে বাজারে অনেক নতুন নতুন শক্তিশালী ফোন আসছে তখন তারা সেই হিসেবে বা অ্যাপ্লিকেশানস এর মানউন্নয়ন করার লক্ষে অ্যাপ্লিকেশানস আপডেট দিয়ে থাকেন। কিন্তু এটা জরুরী নয় যে সেই আপডেট আপনার ফোনটির জন্যও নিখুত। অনেক সময় না বুঝে, যেই কোনো অ্যাপ্লিকেশান আপডেট চলে আসে আর সেই আপডেট করে ফেলেন। অনেকে তো আবার প্লে স্টোরে লাগাতার চেক করতে থাকেন যে নতুন কি আপডেট আসলো (ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি)। তো এই না বুঝে অ্যাপ্লিকেশানস আপডেট করার জন্য আপনার স্মার্টফোন স্লো হয়ে যেতে পারে।কেনোনা আপডেট করা অ্যাপ্লিকেশান গুলো সর্বদা আগের ভার্সন থেকে আকারে বড় হয়। এবং বেশি স্টোরেজ এবং র্যাম ব্যবহার করে।
প্রতিকারঃ
যেকোনো অ্যাপ্লিকেশান আপডেট করার আগে দেখে নিন সেই নতুন আপডেটটিতে আপনি নতুন কি কি ফিচার পাচ্ছেন। যদি মনে হয় যে নতুন তেমন কিছু নেই তবে অঝতা আপডেট করার দরকার নেই। অনেক সময় দেখা যায় কেবল অ্যাপ আইকন পরিবর্তন করেই অ্যাপটির নতুন আপডেট ছাড়া হয়েছে। তো এই আপডেট নেওয়া বেকার ছাড়া আর কিছু নয়। তাই আবারও বলবো যে দেখে বুঝে তারপর অ্যাপ্লিকেশানস আপডেট করুন। এতে প্রথমত আপনার স্টোরেজ এবং র্যাম বেঁচে যাবে এবং দ্বিতীয়ত আপনি আগের মতো করেই আপনার ফোনটিকে ব্যবহার করতে পারবেন। প্লে স্টোর থেকে স্বয়ংক্রিয় অ্যাপ্লিকেশানস আপডেট ফিচারটি বন্ধ করে রাখুন। এর ফলে কোনো অ্যাপ্লিকেশান নিজে থেকে আপডেট হতে পারবেনা। বরং আপনি যখন চাইবেন তখন আপডেট করতে পারবেন।
অত্যাধিক অ্যাপ্লিকেশানস ইন্সটলঃ
আমরা প্রায় আমাদের ফোনে অনেক অ্যাপ্লিকেশান ইন্সটল করে দেখি শুধু মাত্র অ্যাপটি পরীক্ষা করে দেখবার জন্য। তারপর আবার অ্যাপটি আনইন্সটলও করে দেয়। কিন্তু অনেক অ্যাপ আছে যেগুলো আনইন্সটল করার পরেও পুরোপুরি ফোন থেকে যায় না। এরা অনেক ফাইলস ফোনে রেখে চলে যায়। এই ফাইল গুলোকে জাঙ্ক ফাইলস বলা হয়। অত্যাধিক জাঙ্ক ফাইলস জমা হওয়ার কারণে আপনার ফোন মেমোরির রিড এবং রাইট স্পীড কমে যেতে পারে। এতে আপনার স্মার্টফোন স্লো কাজ করতে পারে। আবার এমনটাও হয় আপনি একটা অ্যাপ ইন্সটল করে রেখেছেন এবং ব্যবহার করছেন না। কিন্তু অ্যাপটি নিজে থেকেই ব্যাকগ্রাউন্ড এ চালু হয়ে আছে। সেক্ষেত্রে আপনার ফোন এর কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে।
প্রতিকারঃ
এক্ষেত্রে আমি এটাই বলবো যে আপনি যে অ্যাপ গুলো ব্যবহার করেন শুধু সে গুলোই ইন্সটল করে রাখুন। যে অ্যাপ গুলোর প্রয়োজন নেই বা খুব কম ব্যবহার করেন সেগুলো না রাখায় ভালো। এতে আপনার ফোনের স্টোরেজ ফাঁকা হয়ে যাবে, আপনি বেশি র্যাম ব্যবহার করতে পারবেন, ফোন এর চার্জও বেশি থাকবে এবং একটি ফাস্ট অভিজ্ঞতা অনুভূত হবে। আর জাঙ্ক ফাইল গুলো পরিষ্কার করার জন্য প্লে স্টোরে অনেক ভালো ভালো অ্যাপস পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। তবে সবসময় লাইট অ্যাপ ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।
খণ্ডিত (FRAGMENTED) ফাইলসঃ
ফোন ব্যবহার করতে করতে সময়ের সাথে সাথে আমরা এতে অনেক ফাইলস সেভ করতে শুরু করি। যেমন, অনেক ফটো স্টোর করি, ভিডিও সেভ করি, অনেক মিউজিক স্টোর করি এবং ফাইলস গুলোকে বিভিন্ন ফোল্ডারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখি। আপনার ফোনটিতে অত্যাধিক খণ্ডিত ফাইলস জমা হয়ে যাওয়ার কারণে আপনার স্মার্টফোন স্লো হয়ে যেতে পারে। অনেক Fragmented ফাইলস এর জন্য আপনার ফোনটি ঠিক মতো ডাটা রিড অ্যান্ড রাইট করতে পারে না, বা অনেক স্লো কাজ করে।
প্রতিকারঃ
এই পোস্টটি যদি উইন্ডোজ পিসি ওয়ালারা পড়ে থাকেন তবে আপনারা জানেন যে কীভাবে Fragmented ফাইলস গুলোকে ডিফ্র্যাগমেন্ট করা যায়। উইন্ডোজ পিসিতে নিজে থেকেই ডিফ্র্যাগমেন্ট করার অপশন থাকে। এখন যদি কথা বলি স্মার্টফোন এর তবে Android এ নিজে থেকে ডিফ্র্যাগমেন্ট করার কোন অপশন থাকেনা। এর জন্য বিভিন্ন অ্যাপস প্লে স্টোরে থাকতে পারে। কিন্তু এদের কর্মদক্ষতা নিয়ে আমি নিশ্চিত নয়। তাই আমি বলবো যে আপনার ফোনটিকে অন্তত ২-৩ মাসের ভেতর একবার করে ফ্যাক্টরি রিসেট করুন। ফ্যাক্টরি রিসেট করার পূর্বে সকল ডাটা গুলো ব্যাকআপ করে রাখুন। রিসেট করার করার পরে আপনি ডাটাগুলো পুনরায় রিস্টোর করতে পারেন। এতে আপনার স্মার্টফোনটির মেমোরি একেবারে ফ্রেস অবস্থায় চলে যাবে। এবং আপনি আগের মতো কর্মক্ষমতা ফিরে পাবেন।
একনজরে স্মার্টফোন ফাস্ট করার উপায় সমূহঃ
উপরে তো স্মার্টফোন স্লো হওয়ার সম্ভাব্য কারন সমূহ এবং এর প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। তো চলুন আবার একবার দ্রুত নজর বোলানো যাক। আপনি যদি একটি সর্বোপরি ফাস্ট স্মার্টফোন ব্যাবহারের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান তবে প্রত্যেক ২-৩ মাসে আপনার ফোনটিকে একবার ফ্যাক্টরি রিসেট করে নিন। ফ্যাক্টরি রিসেট করার পূর্বে অবশ্যই আপনার ইমেজ অথবা ফাইলস গুলোর ব্যাকআপ করে রাখুন। ফ্যাক্টরি রিসেট করার পরে শুধু সেই অ্যাপ্লিকেশান গুলোই ব্যবহার করুন যেগুলো আপনি সর্বদা ব্যবহার করে থাকেন। অপ্রয়োজনীয় কোনো অ্যাপস ইন্সটল করা থেকে বিরত থাকুন। তো আপনি যদি প্রত্যেক ২-৩ মাসে আপনার ফোনটিকে রিসেট করেন তবে আপনার ফোনটি অনেক লম্বা সময় ধরে ভালো পারফরমেন্স দেবে। তাছাড়াও বাকী বিষয় গুলোর উপরও ভালোভাবে খেয়াল রাখুন। আশা করি এখন আপনি নিজেই নির্ধারণ করতে পারবেন যে কখন আপনার ফোনকে OTA আপডেট করতে হবে অথবা কখন অ্যাপ্লিকেশানস আপডেট করবেন।
Thank you brother for help me
ReplyDeleteThanks Boss
ReplyDelete