Header Ads

তিনটি জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে আলোচনা

এন্ড্রোয়েড


প্রথমে কথা বলি সবচাইতে জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে; যে অপারেটিং সিস্টেম যতোবেশি জনপ্রিয় আর সিকিউরিটি সমস্যা ততোবেশি। কিন্তু সমস্যা রয়েছে আরো অনেক বিষয়ের উপর—কেনোনা অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম গুগলের হলেও, আপনার ফোনটি যদি স্যামসাং হয় কিংবা এলজি হয় তবে এর সিকিউরিটি দায়িত্ব স্যামসাং বা এলজির। ধরুন অ্যান্ড্রয়েড ললিপপে কোন সিকিউরিটি সমস্যা দেখা দিল এবং সমস্যাটি ফিক্স করার জন্য গুগল সিকিউরিটি প্যাঁচ রিলিজ করলো, এই প্যাঁচ সাথে সাথে গুগল ডিভাইজ গুলো পেয়ে যাবে কিন্তু আপনার স্যামসাং ফোনে কবে আপডেট আসবে সেটার দায়িত্ব স্যামসাং এর। যেমন  অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে এমন এক সিকিউরিটি সমস্যা ছিল, আপনার ফোনে কেউ সাধারন ম্যাসেজ সেন্ড করেই আপনার ফোনকে ম্যালওয়্যার দ্বারা অ্যাটাক করাতে পারতো। সাধারনত হয় কি, যখন আপনার ফোনে কোন মাল্টিমিডিয়া ম্যাসেজ আসে, সেটা আপনি ওপেন করার আগেই ফোন সেটাকে নেটওয়ার্ক থেকে নিয়ে নিজের মধ্যে লোড করে রাখে। এখন যদি কোন হ্যাকার কোন ম্যালিসিয়াস কোড দিয়ে আপনার ফোনে এমএমএস সেন্ড করে তবে সেটা আপনার ফোনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রান হয়ে যাবে, আর এই পদ্ধতিতে যেকোনো ফোনই কোন ঝামেলা ছাড়ায় আক্রান্ত করানো সম্ভব।
শুধু গুগল নেক্সাস ডিভাইজ গুলোই ১০০% নিশ্চয়তা দেয় যে, এই সিকিউরিটি সমস্যা ফিক্স করা হয়েছে। কিন্তু আপনি যদি অন্যান্য কোম্পানির  অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করেন, তবে হতে পারে এখনো আপনার ফোনে এই সিকিউরিটি সমস্যা রয়েছে।
আবার আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, অ্যান্ড্রয়েড একটি ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম; অর্থাৎ এর সোর্স কোড যে কেউ দেখতে পারবে এবং মডিফাই করতে পারবে। হতে পারে কোন অত্যন্ত চালাক অ্যাপ ডেভেলপার অনেক কমপ্লেক্স সি প্রোগ্রাম বা কমপ্লেক্স জাভা দ্বারা কোন অ্যাপে ম্যালিসিয়াস কোড ইনজেক্ট করে রেখেদিল, যেটা ইউজার ডাটা স্পাই করবে এবং এই ধরনের অ্যাপকে সনাক্ত করা অনেক মুশকিল। ফল স্বরূপ, বর্তমানে প্লে স্টোরে অনেক জনপ্রিয় অ্যাপ থেকে ম্যালিসিয়াস কোড পাওয়া যাচ্ছে।
আবার আপনি যদি গুগল প্লে স্টোর ব্যতিত আলাদা সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করেন তবে আপনার সিকিউরিটি নিয়ে কোন নিশ্চয়তা দেওয়া অসম্ভব। ক্র্যাক অ্যাপ, সাইড লোড অ্যাপ এগুলোতে ম্যালিসিয়াস কোড ইনজেক্ট করা থাকতে পারে, এমনকি অনেক ফেইক ব্যাংকিং অ্যাপ রয়েছে যেগুলো ফেক লগইন ব্যবহার করে আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে নিতে পারে। আর আপনি যদি আপনার ব্যাংকিং অ্যাপ গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড না দিয়ে থাকেন, তবে আপনার অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম নিজের সিকিউরিটি রক্ষার্থে কিছুই করতে পারবে না।
উপরের ব্যাপার গুলো পড়ে একজন অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী হিসেবে আপনার ভালো না লাগারই কথা। তবে গুগল তার ডিভাইজ গুলো নিয়মিত আপডেট প্রদান করে এবং বিভিন্ন প্যাঁচ ফিক্স করে। তাই আমার মতে নেক্সাস, পিক্সেল; সিকিউরিটির দিক থেকে পারফেক্ট ডিভাইজ। আপনি যদি আলাদা কোম্পানির ডিভাইজ ব্যবহার করেন, তবে কোন প্রকারের আপডেট, বিশেষ করে সিকিউরিটি আপডেট আসার সাথে সাথে সেটাকে ইন্সটল করে নিন। মনে রাখবেন, অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম যেমন আপনার কাছে প্রিয়, ঠিক তেমনি স্ক্যামার আর হ্যাকারের কাছেও প্রিয়।

উইন্ডোজ ফোন


উপরের সমস্যা গুলোর সাথে তুলনা করতে গেলে উইন্ডোজ ফোন চরম সিকিউর, এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক বেশি টাইট। কিন্তু কোন বিষয় গুলো উইন্ডোজ ফোনকে এতোবেশি নিরাপদ বানায় চলুন তার উপর আলোকপাত করা যাক।

এর সবচাইতে বড় কারণ হচ্ছে, উইন্ডোজ ফোনের অ্যাপ স্টোর অনেক বেশি টাইট এবং শিকলে বাঁধা, আপনার ফোনটি জেল ব্রেইক করা ছাড়া, ফোনে যেকোনো অ্যাপ অবশ্যই উইন্ডোজ স্টোর থেকেই ডাউনলোড করতে হবে। আপনি কোন তৃতীয়পক্ষ সোর্স থেকে অ্যাপ ইন্সটল করতে পারবেন না। যেহেতু শুধু বিশ্বস্ত সোর্স থেকেই অ্যাপ ডাউনলোড করার সুবিধা পান, তাই অপারেটিং সিস্টেম ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কোন সুযোগ থাকে না। তাছাড়া উইন্ডোজ ফোন অপারেটিং সিস্টেম স্যান্ড বক্স টেকনোলজি ব্যবহার করে; অর্থাৎ কোন অ্যাপ বাকী অপারেটিং সিস্টেমের কোন অংশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না যতোক্ষণ পর্যন্ত আপনি তার অনুমতি প্রদান না করবেন। কোন অ্যাপই এমন কোন সিস্টেম প্রসেস চালু করতে পারবে না, যেটা আপনার চোখে পড়বে না। তাই অ্যাপ কিছু করার চেষ্টা করলেও করতে পারবে না।

তবে এর মানে কিন্তু এটা নয় যে, উইন্ডোজ ফোনের অ্যাপে ভালনেরাবিলিটি থাকতে পারেনা। তবে উইন্ডোজ নিয়মিত আপডেট প্রদান করার মাধ্যমে সিকিউরিটি প্যাঁচ ফিক্স করে দেয়। তাই সর্বাধিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই আপনাকে উইন্ডোজ ফোন আপডেটেড রাখতে হবে। ম্যানুয়ালি সেটিং থেকে আপডেট করে নিতে পারেন আবার চাইলে স্বয়ংক্রিয় আপডেটও চালু করতে পারেন। উইন্ডোজ ফোনের আরেকটি ভালো দিক হচ্ছে, এর ব্যবহারকারী অনেক কম। আর কম ব্যবহারকারী ওয়ালা ওএস হ্যাকার দ্বারা টার্গেট অনেক কম হয়, আর সেটা আপনার জন্য অনেক ভালো। উইন্ডোজ ফোন এজন্য আপনাকে বুক ফুলে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রদান করে, আর সারা উইন্ডোজ স্টোর খুঁজলেও এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম পাওয়া যায় না—কেনোনা এর কোন প্রয়োজনীয়তায় নেই।

উইন্ডোজ ফোনের আরেকটি বিশেষ ফিচার হচ্ছে, ডিভাইজ এনক্রিপশন। আপনার ফোনটি হারিয়ে যাওয়ার পরেও আপনার ডাটা গুলো কেউ অ্যাক্সেস করতে পারবে না। যদি কেউ সঠিক এনক্রিপশন কী প্রদান না করতে পারে, ডাটা গুলো কখনোই ডি-ক্রিপ্ট করা সম্ভব হবে না। সেটিংস থেকে আপনার ডিভাইজের জন্য সহজেই এনক্রিপশন চালু করতে পারেন।

আই ও এস


জনপ্রিয়তার দিক থেকে অ্যাপেলের আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড এর পরেই। আইওএস’কে আনলক করা অসম্ভব, এই ধারণা আগে করা হলেও সেটি এখন নষ্ট হয়ে গেছে। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, বছর খানেক আগে এফবিএই এবং অ্যাপেলের মধ্যে বিরাট সমস্যা দেখা দিয়েছিল একটি আইফোন সিকিউরিটি ক্র্যাক করার ব্যাপারে, অ্যাপেল তাদের ফোন আনলক করা নিয়ে মানা করে দিয়েছিল এফবিআই’কে। কিন্তু পরে এক হ্যাকার সেই আইফোনকে আরামে ক্র্যাক করে ১.৩ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট নিয়ে নেয়। এই ঘটনা এটাই প্রমান করে যে, ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে কোন সিকিউরিটিই ১০০% দাবি করতে পারবে না সেটা ১০০% নিরাপদ।
গুগল প্লে স্টোরের মতো আইওএস’এর ও অ্যাপ স্টোর রয়েছে, যেখানে অ্যাপেল সকল অ্যাপ গুলোকে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে তবেই রাখে। আগে শুধু ধারণা করা হতো, জেইল ব্রেইক করা আইফোনই ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে, কিন্তু বর্তমানে অ্যাপ স্টোরে কিছু চাইনিজ অ্যাপ থেকে ম্যালওয়্যার পাওয়া গেছে। তাই বলতে পারেন, আপনি যতোটা ভেবেছিলেন, অ্যাপেল ততোটা সিকিউরিটি সচেতন নয়। কিন্তু অ্যাপেল অ্যান্ড্রয়েডের মতো ওপেন সোর্স নয়, এটি ক্লোজড সোর্স অপারেটিং সিস্টেম এবং সাথে স্যান্ড বক্স টেকনোলজি রয়েছে; অর্থাৎ কোন অ্যাপ আপনার পারমিশন ছাড়া অপারেটিং সিস্টেমের নির্দিষ্ট কিছু অ্যাক্সেস করতে পারবে না। তাছাড়া আইওএস এর এনক্রিপশন ক্র্যাক করা অনেক বেশি শক্ত, যদিও ক্র্যাক করা সম্ভব তারপরেও যেমন তেমন হ্যাকার ক্র্যাক করতে পারবে না। তবে এটা মানতেই হবে, অ্যাপেল আপনার গোপনীয়তার বিশেষ কদর করে, এরা আপনার অনুমতি ছাড়া কোন ডাটায় অ্যাক্সেস করে না।

No comments

Leave a comment to inspire us.

Powered by Blogger.