প্যালিনড্রমিক সংখ্যা (PALINDROMIC NUMBER)
মানুষ প্রকৃতিগত ভাবেই জ্ঞানপিপাসু। অজানাকে জানাতে চায় অচেনাকে চিনতে চায়। আর চায় প্রকৃতির গোপন ও রহস্যময় ভাষা বুঝতে। দার্শনিক পীথাগোরাস বিশ্বাস করতেন প্রকৃতির ভাষা হল গণিত। তার বিশ্বাস ছিল, আমরা যদি গণিতকে আয়ত্ত করতে পারি একমাত্র তবেই আমরা প্রকৃতিকে বুঝতে পারব। আসলে আমাদের আশেপাশের পরিবেশ ও প্রকৃতির সকল কিছুই গণিতের নিয়মে চলে। তাই গণিতের ভাষা হল প্রকৃতিকে বোঝার ভাষা।
গণিতের একটি ব্যাপারে আলোচনার আগে একটা মজার বিষয় লক্ষ করি (যদিও ব্যাপারটা অপ্রাসঙ্গিক না), madam শব্দটিকে আমরা উল্টো কিংবা সোজা যে দিক থেকেই পড়ি না কেন সেটি madam ই থাকবে। ইংরেজিতে এ রকম আরও বেশ কিছু শব্দ আছে যেমন- radar, deed, dad, tat, eve, aba ইত্যাদি। আপনি এদেরকে যে দিক থেকেই পড়েন না কেন এগুলো ঐরকমই থাকবে। ইংরেজিতে এ ধরনের সবচেয়ে বড় শব্দ হল – redivider। তাছাড়া দুটি বাক্য লক্ষ করুন – Madam I’m Adam ও NAME NO ONE MAN । এছাড়াও কিছু বাক্য সমষ্টি আছে – a man, a plan, a canal…..panama।এ শব্দ সমষ্টিকে আপনি উল্টো সোজা সবভাবেই পরতে পারবেন। বাংলা ভাষায়ও এরকম উদাহরণ আছে। যেমন- “রমাকান্ত কামার”। আমার জানা মতে বাংলায় এই ধরনের সব থেকে বড়টি হল : “সদানন্দ চন্দন দাস”। এভাবে যেসব শব্দ সমষ্টিকে উল্টো সোজা দু’ভাবেই পড়া যায় তাদেরকে বলা হয় palindrome (প্যালিনড্রম)।
যেমন, ২০১২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির তারিখের দিকে খেয়াল করলে দেখবেন, সেটিও প্যালিনড্রমিক।
এরকম এক ধরনের কবিতাও আছে তদেরকেও palindrome (প্যালিনড্রম) বলা হয়। যাই হোক, এবার গণিতের কথায় আসি, এমন কিছু সংখ্যা আছে যাদেরকে উল্টো সোজা যে ভাবেই পড়েন না কেন তারা পাল্টায় না, আগের মতই থাকে। এগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে প্যালিনড্রমিক নাম্বার( palindromic number) বা প্যাঁলিনড্রমিক সংখ্যা। যেমন- ৫০৫।
আসলে যে সকল কিছুকে উল্টো ও সোজা দুই দিক থেকেই পড়া যায় তাদেরকে প্যালিনড্রম বলে। “palindrome” শব্দটি গ্রিক “palindromos” থেকে এসেছে। এর ভাষাগত অর্থ “come back again” বা “পুনরায় ফিরে আসা”। গণিতপ্রেমীদের এই বিশেষ সংখ্যা নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। আমারা ইচ্ছামত সংখ্যা বসিয়ে এরকম সংখ্যা অনেক তৈরি করতে পারি। যেমন- ২৫২৯৭৯২৫২, ২৫৬৯৫৯৬৫২ ইত্যাদি।
এ দুটি সংখ্যাকে উল্টো সোজা দু’দিক থেকে পড়লেও একই থেকে যাবে।
কিন্তু কথা হল, এমন কোন সুত্র কি আছে যা থেকে আমরা কোন ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা নিয়ে তা থেকে কোন একটি প্যালিনড্রমিক নাম্বারে পৌছতে পারব?
উত্তর হল হ্যাঁ, গণিতবিদরা আমাদের এ রকম একটি অ্যালগরিদম দিয়েছেন যা থেকে আমরা কোন ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা নিয়ে তা থেকে কোন একটি প্যালিনড্রমিক নাম্বারে পৌছাতে পারব। অ্যালগরিদমটি হল,
--> কোন সংখ্যা নিতে হবে
--> সংখ্যাটিকে উল্টো করে তার সাথে মূল সংখ্যা যোগ করতে হবে
--> এটি যদি প্যালিনড্রমিক সংখা না হয় তবে দ্বিতীয় ধাপ আবার পুনরায় করতে হবে।
একটি উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে। মনে করি, আমারা ৭৮ সংখ্যাটিকে ব্যবহার করে কোন প্যালিনড্রমিক সংখ্যায় পৌছাতে চাই। তাহলে নিচের মত অনুসরন করতে হবে………………
৭৮ এর উল্টো =৮৭ , এখন ৭৮ ও ৮৭ যোগ করতে হবে
৭৮ + ৮৭ = ১৬৫
১৬৫ + ৫৬১ = ৭২৬
৭২৬ + ৬২৭ = ১৩৫৩
১৩৫৩ + ৩৫৩১ = ৪৮৮৪
এখানে ২য় ধাপটি ৪ বার করার পর আমরা যোগফল ৪৮৮৪ পেয়েছি, যা একটি প্যালিনড্রমিক সংখ্যা। তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি এক বা একাধিক ধাপ ইনটারেসন করে আমরা কোন প্যালিনড্রমিক সংখ্যায় পৌছতে পারছি। গণিতবিদরা দেখেছেন ১০০০০ এর চেয়ে ছোট সংখ্যাগুলোর ৮০% ই ৪ বা তার কম সংখ্যক ইনটারেসন করেই প্যালিনড্রমিক সংখ্যায় পৌছানো যায়, আর ২০% এর জন্য ৭ বা তার কম। কিন্তু একটি বড় সংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় ইনটারেসন সংখ্যা একটি ছোট সংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় ইনটারেসন সংখ্যা থেকে কম বা বেশি দুটি ই হতে পারে। যেমন- ৭৮ এর জন্য লাগে ৪ ধাপ এর থেকে অনেক বড় সংখ্যা ৫২৮০ এর জন্য লাগে কত দেখুন-
৫২৮০ + ০৮২৫ = ৬১০৫
৬১০৫ + ৫০১৬ = ১১১২১
১১১২১ + ১২১১১ = ২৩২৩২
মাত্র ৩ ধাপ। তাই না? কিন্তু এর থেকে অনেক ছোট সংখ্যা ৮৯ এর জন্য লাগে মাত্র ২৪ ধাপ। হাঃ হাঃ 🙂
এখন একটি প্রশ্নঃ এভাবে আমরা প্রতিটি সংখ্যা নিয়ে ধাপে ধাপে ইনটারেসন করলেই কি নিশ্চিত একটা প্যালিনড্রমিক সংখ্যায় পৌছতে পারব? এর উত্তর এখনো ভাল ভাবে জানা নেই। কারণ গণিতবিদরা এমন সংখ্যা পেয়েছেন যেগুলোর বেলায় এই অ্যালগরিদম প্রয়োগ করে কোন প্যালিনড্রমিক সংখ্যায় এখনো পৌছতে পারা যায় নি। একরম একটি সংখ্যা হল – ১৯৬। এটিকে নিয়ে অনেক গণিতবিদ হাজার হাজার বার ইনটারেসন করেও কোন প্যালিনড্রমিক সংখ্যায় এখনো পৌছতে পারেন নি। একটি অবাক করা খবর হল, ২০০১ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১৯৬ কে নিয়ে ইনটারেসন করতে করতে ১ কোটি ৩০ লক্ষ অঙ্ক বিশিষ্ট সংখায় পাওয়া যাওয়ার পরও কোন সমাধানে পৌঁছানো যায় নি, মানে কোন প্যালিনড্রমিক সংখ্যার দেখা মেলে নি। গণিতবিদরা এর নাম দিয়েছেন ১৯৬-প্রবলেম। এটি এখনো গণিতবিদদের কাছে বড় একটি ধাঁধা। এখনো আমরা জানি না আদৌ ১৯৬ এর কোন সমাধান কোন দিন আমরা পাব কি না। তবে আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
------------------------------------------------------------------------------------
[ লেখাটি বিজ্ঞান বাংলা প্রকাশিত গ্যালাক্টিকা ম্যাগাজিনের জানুয়ারি সংখ্যা,২০১২ তে প্রকাশিত ]
গণিতের একটি ব্যাপারে আলোচনার আগে একটা মজার বিষয় লক্ষ করি (যদিও ব্যাপারটা অপ্রাসঙ্গিক না), madam শব্দটিকে আমরা উল্টো কিংবা সোজা যে দিক থেকেই পড়ি না কেন সেটি madam ই থাকবে। ইংরেজিতে এ রকম আরও বেশ কিছু শব্দ আছে যেমন- radar, deed, dad, tat, eve, aba ইত্যাদি। আপনি এদেরকে যে দিক থেকেই পড়েন না কেন এগুলো ঐরকমই থাকবে। ইংরেজিতে এ ধরনের সবচেয়ে বড় শব্দ হল – redivider। তাছাড়া দুটি বাক্য লক্ষ করুন – Madam I’m Adam ও NAME NO ONE MAN । এছাড়াও কিছু বাক্য সমষ্টি আছে – a man, a plan, a canal…..panama।এ শব্দ সমষ্টিকে আপনি উল্টো সোজা সবভাবেই পরতে পারবেন। বাংলা ভাষায়ও এরকম উদাহরণ আছে। যেমন- “রমাকান্ত কামার”। আমার জানা মতে বাংলায় এই ধরনের সব থেকে বড়টি হল : “সদানন্দ চন্দন দাস”। এভাবে যেসব শব্দ সমষ্টিকে উল্টো সোজা দু’ভাবেই পড়া যায় তাদেরকে বলা হয় palindrome (প্যালিনড্রম)।
যেমন, ২০১২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির তারিখের দিকে খেয়াল করলে দেখবেন, সেটিও প্যালিনড্রমিক।
এরকম এক ধরনের কবিতাও আছে তদেরকেও palindrome (প্যালিনড্রম) বলা হয়। যাই হোক, এবার গণিতের কথায় আসি, এমন কিছু সংখ্যা আছে যাদেরকে উল্টো সোজা যে ভাবেই পড়েন না কেন তারা পাল্টায় না, আগের মতই থাকে। এগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে প্যালিনড্রমিক নাম্বার( palindromic number) বা প্যাঁলিনড্রমিক সংখ্যা। যেমন- ৫০৫।
আসলে যে সকল কিছুকে উল্টো ও সোজা দুই দিক থেকেই পড়া যায় তাদেরকে প্যালিনড্রম বলে। “palindrome” শব্দটি গ্রিক “palindromos” থেকে এসেছে। এর ভাষাগত অর্থ “come back again” বা “পুনরায় ফিরে আসা”। গণিতপ্রেমীদের এই বিশেষ সংখ্যা নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। আমারা ইচ্ছামত সংখ্যা বসিয়ে এরকম সংখ্যা অনেক তৈরি করতে পারি। যেমন- ২৫২৯৭৯২৫২, ২৫৬৯৫৯৬৫২ ইত্যাদি।
এ দুটি সংখ্যাকে উল্টো সোজা দু’দিক থেকে পড়লেও একই থেকে যাবে।
কিন্তু কথা হল, এমন কোন সুত্র কি আছে যা থেকে আমরা কোন ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা নিয়ে তা থেকে কোন একটি প্যালিনড্রমিক নাম্বারে পৌছতে পারব?
উত্তর হল হ্যাঁ, গণিতবিদরা আমাদের এ রকম একটি অ্যালগরিদম দিয়েছেন যা থেকে আমরা কোন ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা নিয়ে তা থেকে কোন একটি প্যালিনড্রমিক নাম্বারে পৌছাতে পারব। অ্যালগরিদমটি হল,
--> কোন সংখ্যা নিতে হবে
--> সংখ্যাটিকে উল্টো করে তার সাথে মূল সংখ্যা যোগ করতে হবে
--> এটি যদি প্যালিনড্রমিক সংখা না হয় তবে দ্বিতীয় ধাপ আবার পুনরায় করতে হবে।
একটি উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে। মনে করি, আমারা ৭৮ সংখ্যাটিকে ব্যবহার করে কোন প্যালিনড্রমিক সংখ্যায় পৌছাতে চাই। তাহলে নিচের মত অনুসরন করতে হবে………………
৭৮ এর উল্টো =৮৭ , এখন ৭৮ ও ৮৭ যোগ করতে হবে
৭৮ + ৮৭ = ১৬৫
১৬৫ + ৫৬১ = ৭২৬
৭২৬ + ৬২৭ = ১৩৫৩
১৩৫৩ + ৩৫৩১ = ৪৮৮৪
এখানে ২য় ধাপটি ৪ বার করার পর আমরা যোগফল ৪৮৮৪ পেয়েছি, যা একটি প্যালিনড্রমিক সংখ্যা। তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি এক বা একাধিক ধাপ ইনটারেসন করে আমরা কোন প্যালিনড্রমিক সংখ্যায় পৌছতে পারছি। গণিতবিদরা দেখেছেন ১০০০০ এর চেয়ে ছোট সংখ্যাগুলোর ৮০% ই ৪ বা তার কম সংখ্যক ইনটারেসন করেই প্যালিনড্রমিক সংখ্যায় পৌছানো যায়, আর ২০% এর জন্য ৭ বা তার কম। কিন্তু একটি বড় সংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় ইনটারেসন সংখ্যা একটি ছোট সংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় ইনটারেসন সংখ্যা থেকে কম বা বেশি দুটি ই হতে পারে। যেমন- ৭৮ এর জন্য লাগে ৪ ধাপ এর থেকে অনেক বড় সংখ্যা ৫২৮০ এর জন্য লাগে কত দেখুন-
৫২৮০ + ০৮২৫ = ৬১০৫
৬১০৫ + ৫০১৬ = ১১১২১
১১১২১ + ১২১১১ = ২৩২৩২
মাত্র ৩ ধাপ। তাই না? কিন্তু এর থেকে অনেক ছোট সংখ্যা ৮৯ এর জন্য লাগে মাত্র ২৪ ধাপ। হাঃ হাঃ 🙂
এখন একটি প্রশ্নঃ এভাবে আমরা প্রতিটি সংখ্যা নিয়ে ধাপে ধাপে ইনটারেসন করলেই কি নিশ্চিত একটা প্যালিনড্রমিক সংখ্যায় পৌছতে পারব? এর উত্তর এখনো ভাল ভাবে জানা নেই। কারণ গণিতবিদরা এমন সংখ্যা পেয়েছেন যেগুলোর বেলায় এই অ্যালগরিদম প্রয়োগ করে কোন প্যালিনড্রমিক সংখ্যায় এখনো পৌছতে পারা যায় নি। একরম একটি সংখ্যা হল – ১৯৬। এটিকে নিয়ে অনেক গণিতবিদ হাজার হাজার বার ইনটারেসন করেও কোন প্যালিনড্রমিক সংখ্যায় এখনো পৌছতে পারেন নি। একটি অবাক করা খবর হল, ২০০১ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১৯৬ কে নিয়ে ইনটারেসন করতে করতে ১ কোটি ৩০ লক্ষ অঙ্ক বিশিষ্ট সংখায় পাওয়া যাওয়ার পরও কোন সমাধানে পৌঁছানো যায় নি, মানে কোন প্যালিনড্রমিক সংখ্যার দেখা মেলে নি। গণিতবিদরা এর নাম দিয়েছেন ১৯৬-প্রবলেম। এটি এখনো গণিতবিদদের কাছে বড় একটি ধাঁধা। এখনো আমরা জানি না আদৌ ১৯৬ এর কোন সমাধান কোন দিন আমরা পাব কি না। তবে আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
------------------------------------------------------------------------------------
[ লেখাটি বিজ্ঞান বাংলা প্রকাশিত গ্যালাক্টিকা ম্যাগাজিনের জানুয়ারি সংখ্যা,২০১২ তে প্রকাশিত ]
Amazing.....
ReplyDeleteNice
ReplyDeleteReally Nice Info
ReplyDelete