কোথায় লুকনো রয়েছে ‘অদৃশ্য শক্তি’?
Dark Energy |
‘ডার্ক এনার্জি’কী জিনিস, তার উৎস কোথায়, সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া কি আজও সম্ভব?গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর আর ২৬ ডিসেম্বর আমেরিকার ‘লাইগো’ ডিটেক্টরে যে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণিত হল, পদার্থবিজ্ঞানী অশোক সেনের মতে ,নিঃসন্দেহে এটা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।তবে এটাও খুব সত্যি কথা, এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গের অস্তিত্বের পূর্বাভাস অনেক দিন আগেই দেওয়া হয়েছিল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদে। তার পর ১০০ বছর ধরে একের পর এক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আইনস্টাইনের ওই তত্ত্বের অভাবনীয় সাফল্যের পর মহাকর্ষীয় তরঙ্গের হদিশ পাওয়া না গেলে, সেটাই খুব অস্বাভাবিক ঘটনা হয়ে যেত! তা ছাড়াও যে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের হদিশ এ বছর প্রথম পাওয়া গিয়েছিল, দু’টি বাইনারি পালসারের মধ্যে ১৩০ কোটি বছর আগেকার একটি সংঘর্ষের ঘটনায় তার জন্ম হয়েছিল। বাইনারি পালসার নিয়ে পরীক্ষার ফলাফলে এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গের অস্তিত্বের কথা কিন্তু আগেই, পরোক্ষ ভাবে প্রমাণিত হয়েছিল। এ বার নতুনত্ব যেটায়, তা হল- ‘লাইগো’য় প্রথম এটার সরাসরি হদিস মিলল।
এই আবিষ্কারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এই ব্রহ্মাণ্ডের প্রকৃতি আর তার নানা অজানা, অচেনা ঘটনা জানার জন্য এত দিন তরিৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গকেই (যেমন, আলো) প্রধান মাধ্যম বলে জানা হত। আলোই এত দিন মানুষের অনেক দূরের আর অনেক আগেকার নানা অজানা, অচেনা তথ্য জানিয়ে এসেছে। জানিয়ে চলেছে এখনও। এখন এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ একেবারেই একটি নতুন মাধ্যম হিসেবে খবর আদান-প্রদানের জন্য আমাদের সামনে নতুন একটি জানলা খুলে দিল। যেমন, আমেরিকার ‘লাইগো’য় প্রথম যে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের হদিশ মিলেছে, তার উদ্ভব হয়েছিল ১৩০ কোটি বছর আগে দু’টি বাইনারি পালসারের (আদতে দু’টি কৃষ্ণগহ্বর) মধ্যে সংঘর্ষের দরুন। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ না থাকলে, আমরা কোনও দিন জানতেই পারতাম না, ওই দু’টি বাইনারি পালসারের মধ্যে কোনও দিন সংঘর্ষ হয়েছিল কি না। বা, সেই সংঘর্ষ ঠিক কত দিন আগে হয়েছিল? কোথায় হয়েছিল? তার মানে, ওই সংঘর্ষের কথা এত দিন আমাদের কাছে অজানা ছিল। যা আমাদের জানাল মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। এটাই প্রমাণ করল, মহাকর্ষীয় তরঙ্গের আবিষ্কার এই ব্রহ্মাণ্ডকে আরও বেশি করে জানা ও চেনার জন্য আমাদের সামনে জানলাটাকে কতটা খুলে দিয়েছে।
২০১২ সালে সুইৎজারল্যান্ডের জেনিভায়, সার্নের লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে (এলএইচসি) আবিষ্কৃত হল ‘হিগস বোসন’ কণা। কণা-পদার্থ-বিজ্ঞানের ইতিহাসে যা একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এই আবিষ্কার ‘স্ট্যান্ডার্ড মডেল অফ এলিমেন্টারি পার্টিকল্স’-কে তার সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। এই তত্ত্ব মহাকর্ষীয় বল ছাড়া আর অন্য সব ‘বল’ (ফোর্স বা ফিল্ড)-কেই ব্যাখ্যা করতে পারে। তিন বছরের মধ্যেই ঘটল আরও একটি যুগান্তকারী ঘটনা। আইনস্টাইনের ১০০ বছর আগেকার তত্ব প্রায় সার্বিক ভাবেই প্রমাণিত হল মহাকর্ষীয় তরঙ্গের আবিষ্কার।দু’টিই খুব গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। দু’টির মধ্যে সে ভাবে তুলনা করাটাও কঠিন কাজ। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে। ‘হিগ্স বোসন’ আর মহাকর্ষীয় তরঙ্গ- এই দু’টিরই অস্তিত্বের কথা তাত্ত্বিক ভাবে অনেক দিন আগেই আমাদের জানা হয়ে গিয়েছিল। তাই এক দিন না এক দিন যে ওই দু’টি জিনিসের প্রমাণ মিলবে হাতেনাতে, তা কিন্তু আমরা আগে থেকেই আশা করেচিলেন বিজ্ঞানীরা। পাওয়াটা খুব জরুরি ছিল। কিন্তু এদের আবিষ্কার মোটেই বিস্ময়কর ঘটনা নয়। নয় নতুন কিছুর ইঙ্গিতও। তবে এটা আশা করা যেতেই পারে যে, এলএইচসি আর ‘লাইগো’-র ডিটেক্টরগুলো থেকে আমরা আগামী দিনে অনেক নতুন নতুন আর অজানা ঘটনা জানতে পারব, যা বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে আমাদের যাবতীয় ধ্যান-ধারণাকে আমূল বদলে দেবে।তবে দু’টি আবিষ্কারকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বা যুগান্তকারী তার একটি হল- ‘ডার্ক এনার্জি’ বা ‘অদৃশ্য শক্তি’। অন্যটি- নিউট্রিনো কণার ভরের অস্তিত্বের প্রমাণ। ডার্ক এনার্জি হল সেই অজানা, অচেনা শক্তি (যা ব্রহ্মাণ্ডের মোট ভরের ৭৩ শতাংশের কিছু বেশি), যার দরুন বিভিন্ন গ্যালাক্সি একে অন্যের থেকে ক্রমবর্দ্ধমান গতিবেগে দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু সেই অজানা, অদৃশ্য শক্তির উৎসটা কোথায়, তা কী দিয়ে তৈরি, সে সম্পর্কে এখনও সঠিক কোনও ধারণা নেই। তার মানে, এই ব্রহ্মাণ্ডের চার ভাগের তিন ভাগটাই আমরা জানি না।অন্য দিকে, নিউট্রিনোর মতো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার যে ভর রয়েছে, তার কোনও পূর্বাভাস ‘স্ট্যান্ডার্ড মডেল’-এ ছিল না। কিন্তু, সেই নিউট্রিনোরও ভরের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে। এই দু’টি আবিষ্কারই আগামী দিনে ব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে আ্মাদের অনেক নতুন আর অজানা তথ্য জানাতে পারবে।
No comments
Leave a comment to inspire us.