খুনীর বয়স সনাক্তে রক্তের ছোপ!
গোয়েন্দা গল্পের শেষটা আমরা সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি। চৌকস গোয়েন্দা মহাশয় কোন এক কোণায় লেগে থাকা রক্তের ছাপের সাহায্যেই সনাক্ত করে ফেলেন খুনীকে। টান টান একটা উত্তেজনা শেষে পাঠকরা হাঁফ ছেড়ে উঠি। কিন্তু বাস্তবে এর চাইতেও চমকপ্রদ খবর নিয়ে এসেছেন বিজ্ঞানীরা।
অপরাধ স্থলে প্রাপ্ত ডি এন এর মাধ্যমে ফরেনসিক বিভাগের গোয়েন্দারা সনাক্ত করতে পারবেন অপরাধীকে। ডি এন এতে প্রাপ্ত জেনেটিক তথ্যের মাধ্যমে পাওয়া যায় অপরাধীকে। এক্ষেত্রে সাহায্য করে থাকে চুল কিংবা চোখ। কিন্তু ডি এন এ পরীক্ষা একটি সময়সাপেক্ষ ব্যপার। আলবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ জ্যান হালামেক রক্তের ছাপের মাধ্যমে অপরাধীর বয়স কত হতে পারে তার একটি রাসায়নিক কাঠামো বের করেছেন। এর মাধ্যমে অপরাধস্থলে প্রাপ্ত রক্তের ছোপের মাঝে রাসায়নিক কিছু সনাক্তকারী নির্দেশক বস্তু লাভের মাঝে তা সম্ভব হবে।
মানুষের শরীরে অ্যালকালিন ফসফেট নামক এক ধরনের এনজাইম বা উৎসেচক পাওয়া যায় যা হাড়ের বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত। এটি সাধারণত পাওয়া যায় ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত মেয়েদের ক্ষেত্রে এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে তা ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আস্তে আস্তে এই এনজাইমের পরিমাণ কমতে থাকে। হালামেক ও তার সহকারীরা বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে সফলভাবে এই এনজাইমের ব্যবহার করতে সমর্থ হয়েছেন। তাদের দাবি অনুযায়ী, পরীক্ষার পর শতকরা ৯৯ভাগ ক্ষেত্রে তারা বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে সফল। হালামেক এখন বয়সের এই দূরত্বটা আরো কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন যাতে নির্ভুলভাবে তিনি এই পরীক্ষা সমাপ্ত করতে পারেন।
পরীক্ষাটি একটি ছোট পরিসরে করা হয়েছিল যেখানে ২০০ নমুনারও কম ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিটি এখনো মাঠ পর্যায়ে ব্যবহার করা হয় নি। তাছাড়া, ডি এন এ পরীক্ষার মাধ্যমেও ব্যক্তির বয়স নির্ধারণ করা যায় বলে জানিয়েছেন ম্যানফ্রেড কায়জার, নেদারল্যান্ডের এরাজমাস মেডিক্যাল সেন্টারের একজন অণুজীববিজ্ঞানী।
কিন্তু হালামেক মনে করেন তার এই পরীক্ষার মাধ্যমে শুধু বয়স নয়, আরো নানা ধরনের তথ্য বের হয়ে আসবে। তিনি বলেন যে, ডি এন এ পরীক্ষা বেশ সময়সাপেক্ষ কিন্তু তার এই পরীক্ষার ফলে বেশ আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া যাবে এবং এটি সময় ও বাঁচাবে বহুলাংশে। তিনি মনে করেন এর ফলে ডি এন এ পরীক্ষাগারে যাবার কোন প্রয়োজনই নেই।
এছাড়াও তিনি তার পরীক্ষাতে অন্যান্য জৈবিক নির্দেশিকা ব্যবহার করেছিলেন। যেমন, ক্রিয়েটিন কাইনেজ ও অ্যালানিন ট্রান্সমিনেজ। এগুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে রক্ত একজন পুরুষের শরীর থেকে পাওয়া গিয়েছে নাকি মহিলার, তা জানাও সম্ভব হবে।
No comments
Leave a comment to inspire us.