গুগলের “সিকিউরিটি প্রিন্সেস” একজন হ্যাকার
পারিসা তাবরিজ। গুগলের টপ সিক্রেট উইপন “সিকিউরিটি প্রিন্সেস” |
পারিসা তাবরিজ দুনিয়ার সবচেয়ে বড় টেক জায়ান্ট কোম্পানি গুগলের সাইবার নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। তাঁকে বলা হয় গুগলের টপ সিক্রেট উইপন “সিকিউরিটি প্রিন্সেস”।
এই সিকিউরিটি প্রিন্সেস নিজেও একজন হ্যাকার। সব হ্যাকাররাই অপরাধ কর্মকাণ্ড করেনা। যারা ব্ল্যাক হ্যাট হ্যকার্স তারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে অন্যের তথ্য চুরি করে আর হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার্সরা ঠিক তার উল্টোটা, যারা নিজেদের মেধা ও দক্ষতা ইথিক্যাল হ্যাকিং বা নিরাপত্তা রক্ষায় ব্যবহার করেন।
গুগল ক্রোমের কোটি কোটি ব্যবহারকারীকে হ্যাকারদের আক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে চলেছেন প্রতিনিয়ত তাবরিজ। আজ তিনি দুনিয়ার কোটি ব্যবহারকারীর সিকিউরিটি নিশ্চিত করলেও কলেজে থাকা অবস্থায় তার নিজের ওয়েবসাইটটিও একবার হ্যাকিংয়ের কবলে পড়ে। এরপরেই যুক্ত হোন ওয়েবসাইট সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করে এমন স্টুডেন্ট ক্লাবের সাথে। আর এখান থেকেই ইন্টারনেট সিকিউরিটির পথে যাত্রা শুরু করেন তিনি।
২০০৭ সালে কলেজে পড়াশুনা করা অবস্থায় গুগলে চাকরিতে যোগদান করেন পারিসা তাবরিজ। একজন মেয়ে হিসেবে ৩১ বছর বয়সী পারিসা তাবরিজের পথ চলাটা মোটেও সহজ ছিলনা। গুগলে যোগদানের পর তার কলেজের এক ছেলে বলেছিল,”তুমি চাকরিটা পেয়েছো কারন তুমি একজন মেয়ে”। তারপরও তিনি থেমে যাননি। নিজের মেধা আর যোগ্যতায় ২০১২ সালে ফোর্বস সাময়িকীর ৩০ বছরের কম বয়সী ৩০ জন প্রভাবশালীর কাতারে তার নাম চলে আসে। যেখানে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের নামও ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে জন্ম গুগলের এই নিরাপত্তা রাজকন্যার। দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে সবার বড় পারিসা। বাবা একজন ইরানি ডাক্তার, অন্যদিকে মা পোলিশ-আমেরিকান নার্স। সেদিক দিয়ে তাকে ইরানি-আমেরিকান বলা যায়। পরিবারের বড় মেয়ে হবার সুবাদে দুই ভাইকে সবসময় শাসনের উপর রাখতেন আর সুযোগ পেলেই তাদের পেটাতেন। তারা আরেকটু বড় হবার পর শাসনের সুযোগ কমে আসে। তাই বিভিন্ন কৌশলে তাদের পেটাতে হতো। আর এই কারনেই ভাইয়েরাও তাকে হেনস্থা করার চেষ্টায় থাকতো। তাদের পেটানো এবং হেনস্থা থেকে বাঁচতেই নিত্য নতুন বিভিন্ন উপায় বের করতে হতো তাকে। আর ঠিক এটাই পরবর্তী জীবনে সবচেয়ে সুফল হয়ে দেখা দিল তার। হ্যাকারদের আক্রমণের বহুমুখী প্রচেষ্টা আগাম ভাবতে পারার সক্ষমতা তাকে দ্রুতই গুগলের এত বড় দায়িত্বে নিয়ে আসে।
পারিসা তাবরিজ পড়াশুনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনইস ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পড়াশুনার প্রথম বছরের আগ পর্যন্ত তিনি কম্পিউটার হাত দিয়ে স্পর্শই করেননি। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন, এবং রিসার্চ করেন ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিং সিকিউরিটি নিয়ে।
হ্যাকিং যে ভালো কাজের জন্যেও হতে পারে এটি বোঝানোর উদ্দেশ্যে ১৬ বছরের কম বয়সী মেয়েদের জন্যে কর্মশালা পরিচালনা করেন তিনি। সেখানেই বলেন, “সিকিউরিটি জগতে যোগ্যতা যাচাই হয় দক্ষতার উপর, তুমি মেয়ে নাকি ছেলে তার উপর নয়।”
হ্যাকিং নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘অধিকাংশই হ্যাকারদের খারাপ ভাবেন। হ্যাঁ, অনেকেই খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে হ্যাকিং করেন। তবে তাদের সাথে যোগাযোগ করে ভালো কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। বাগ বাউন্টি ফিক্স করার বিনিময়ে অর্থ দেবার প্রচলন তাদের সুপথে আনতে সাহায্য করবে বলেই মনে করেন তিনি।
হ্যাকিং নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘অধিকাংশই হ্যাকারদের খারাপ ভাবেন। হ্যাঁ, অনেকেই খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে হ্যাকিং করেন। তবে তাদের সাথে যোগাযোগ করে ভালো কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। বাগ বাউন্টি ফিক্স করার বিনিময়ে অর্থ দেবার প্রচলন তাদের সুপথে আনতে সাহায্য করবে বলেই মনে করেন তিনি।
অবসর কাটে ছবি তুলে, পাহাড়ে চড়ে| |
অবসর কাটে ছবি তুলে, পাহাড়ে চড়ে। আর ভীষণ পছন্দ করেন আইসক্রিম বানাতে। ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউয়ে গুগল ক্যাম্পাসের কাছেই থাকেন এই সিকিউরিটি রাজকন্যা। নির্ঘুম রাত আর কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন দুনিয়ার অধিকাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
Collected from BigganProjukti
No comments
Leave a comment to inspire us.