মহাবিশ্ব সৃষ্টি আজও কৌতুহলের এক মহাসমুদ্র
প্রগতিশীল বিশ্বে আজ সর্বত্র প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানের জয়োগান। যুগে যুগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে বিজ্ঞানীদের অবতারণা, তাদের বিজ্ঞান চর্চা, তাদের গবেষণার ফলাফল, আবিষ্কার, উদ্ভাবিত তত্ব, তথ্য বিজ্ঞানকে করেছে ঐশ্বর্যপূর্ণ।আজ আমরা যার সুফল ভোগ করছি। বিজ্ঞান আমাদের রহস্য নিবারণের অন্যতম হাতিয়ার। যেকোন সাধারণ ঘটনা থেকে শুরু করে রহস্যময় সৌরমন্ডলের গতি প্রকৃতি বিশ্লেষণম, সবই বিজ্ঞানে বহুল আলোচিত। তারপরও মহাবিশ্বের সৃষ্টি আজও সকলের কাছে রহস্য আর কৌতুহলের কেন্দ্রবিন্দুতে।
মহাবিশ্ব এবং নিজের সম্পর্কে আমাদের কৌতুহল
মহাবিশ্ব এবং নিজের সম্পর্কে আমাদের কৌতুহল
মাহাবিশ্বের অন্যতম বুদ্ধিদীপ্ত প্রাণী হিসেবে আমরা পৃথিবীতে এসেছি। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে চিন্তা করার শক্তি দিয়েছে, কৌতুহল দিয়েছে, এবং কৌতুহল নিবারণের জন্য দিয়েছে পর্যবেক্ষেণ এবং বিশ্লেষণী ক্ষমতা। পরিস্থিতী অনুযায়ী কার্যপদ্ধতি পরিবর্তন এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য দিয়েছে মানষিক চিন্তাশক্তি এবং মেধা। আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের শক্তিও অসাধারণ।
এই পৃথিবীতে আমার অগমণ একটা সীমাবদ্ধ সময়ের জন্য হলেও মানুষ তার কর্মকান্ডকে পরিচালিত করে অনির্দিষ্ঠ লক্ষে। এজন্যই বংশানুক্রমে পৃথিবী চলেছে আপন গতিতে। আসা যাওয়ার দোলাচলে ক্রমবর্ধমান পথ পাড়ি দিচ্ছে মানব সভ্যতা । তার পরও মানুষের কৌতুহল থেমে নেই,
আমাদের প্রধান কৌতুহল এই মহাবিশ্ব কি? কিভাবে কোথা থেকে এল? আমি কে? কিভাবে, কেন আমার সৃষ্টি হল? পরিবেশের প্রতিটি উপাদান কেন সৃষ্টি হয়েছে, কতদিন চলবে এই মহাবিশ্বের রঙ্গমঞ্চ?
মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধর্মীয় আদর্শ
আমাদের সমাজ বেশ কিছু ধর্মীয় অদর্শের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হচ্ছে। এই মহাবিশ্ব, মহাবিশ্বের নিয়ন্ত্রণ এবং আমাদের কর্মকান্ড বিশ্লেষণ করার জন্য সকল ধর্মেই অসংখ্য মত, নীতি, আদর্শ এবং প্রথা প্রচলিত আছে। তারপরও এ গুলোই আমাদের প্রধান কৌতুহল। এ বিষয়ে কোন উত্তরই যেন শেষ উত্তর নয়। কোন কর্মকান্ডই যেন শেষ নয়, কোন গবেষণায় ফলাফলই যেন প্রকৃত নয়। তার পরও যেহেতু বিজ্ঞান তথ্য উপাত্ত এবং প্রমাণ বিশ্লেষণ করে, তাই বিজ্ঞানকেই আমাদের কৌতুহল নিবারণের সর্বোত্তম পন্থা হিসেবে মেনে নিতে হয়। বিজ্ঞানীদের মতমত বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করেই যেহেতু বিজ্ঞানের নিত্য পথচলা, তাই মতবিরোধও কম নয়।
আমাদের কৌতুহলের সহজতম সমাধান
আমরা আমাদের কৌতহলকে প্রশমিত করার জন্য নিজস্ব ধারণা বা কোন বিশেষ পুস্তক অথবা কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পত্রের সাহায্য নিয়ে থাকি।হয়তবা আংশিক সফল হতে পারি। আবার অনেকে শুধুমাত্র নিজেস্ব ধারণাকেই প্রকৃত উত্তর বলে গ্রহণ করেন। অনেকে আছেন বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যাকে অনেক জটিল বলে গ্রহণ করেন, তাদের জন্যই বলছি, আমাদের কৌতুহলের আংশিক বিজ্ঞান সম্মত সমাধান দিয়েছেন অমল দাশ গুপ্ত। তিনি তার “পৃথিবীর ঠিকানা” বইটিতে মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্যকে অসাধারণ পন্থায় বিশ্লেষণ করেছেন। বইটিতে মহাবিশ্বের সূচনালগ্ন থেকে ৭২০ কোটি বছরের ইতিহাস তুলে ধরেছেন হয়েছে মাত্র ২৪ ঘন্টার একটি কল্পিত দিবাদৈর্ঘ্যের মাধ্যমে। যেখানে আলোচিত হয়েছে “এইপৃথিবীর সৃষ্টি, মানব সভ্যতার আবির্ভাব, পরিবেশের পূর্ণতা ইত্যাদি”।
মনে করুন ১ ঘন্টা সমান ৩০ কোটি বছর, অর্থাৎ প্রতি মিনিট সমান ৫০ লক্ষ বছর। এখন কল্পনা করুন ঠিক রাত বারোটার সময় সৃষ্টিহল রহস্যময় এই পৃথিবীর, তখন পৃথিবী একটি আবর্তমান গ্যাসীয় বস্তুপিন্ড ছারা আর কিছু নয়। কোন প্রাণের অস্তিত্ব থাকারও কোন প্রশ্ন আসে না, কারণ ঐ ঘূর্ণায়মান বস্তুপিন্ডের তাপমাত্রা ছিল আনুমানিক দশ হাজার কোটি সেন্টিগ্রেড। পৃথিবী আস্তে আস্তে শীতল হয়েছে এবং এক সময় তরল হতে হতে তা জমাট বেধেছে। তৈরি হয়েছে পৃথিবীর আদিমতম সমুদ্র।
কিন্তু তখনও প্রাণের অস্তিত্ব সৃষ্টি হয়নি। প্রাণের উৎপত্তি ঘটার মহেন্দ্র ক্ষণটির জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে ভোর ছয়টা পর্যন্ত । ঠিক ভোর ছয়টার সময় আদিম সমুদ্রে কতগুলো অনুবীক্ষণ বিন্দুকে আশ্রয় করে প্রথম প্রাণের জন্ম হয়। তারপর শিরদাঁরওয়ালা প্রাণীর জন্য অপেক্ষা করতে হবে পৌনে নয়টা পর্যন্ত। সকাল নয়টায় উভচর প্রাণীরা মুক্ত বাতাস গ্রহণের উদ্দেশ্যে ডাঙায় উঠে আসে। নয়টা আট মিনিটে জন্ম হয় সরীসৃপের, নয়টা তেইশ মিনিটে ডাইনোসরের, নয়টা পঁচিশ মিনিটে স্তন্যপায়ী আর নয়টা তেত্রিশ মিনিটে জন্ম হয় পাখির। আর সবচেয়ে রহস্যের বিষয় হচ্ছে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ সৃষ্টি হয়েছে পাখি সৃষ্টির ঠিক তেত্রিশ সেকেন্ড পূর্বে।
………………………………………………………………………………..
এখানেই শেষ করছি। সবার জন্য শুভকামনা রইল ।
তথ্যসুত্রঃ বিজ্ঞান প্রযুক্তি ডট কম
No comments
Leave a comment to inspire us.