Header Ads

ইমাম বোখারী (র.)

ইমাম বোখারী (র.)



১৯৪ হিজরীর শাওয়াল মাসের জুমাবার জুমার নামাজের কিছুক্ষণ পর পরই জন্ম নেন এক শিশু। যার বাবা নাম করা মুহাদ্দিস ও বুজুর্গ । যর দাদার দাদা ছিলেন একজন অগ্নি পূজারক। নাম বারদিযবাহ। আর বারদিযবাহ এর ছেলে মুগিরা আশ্রয় নিয়েছিলেন ইসলামের ছায়া তলে। বাবা ইসমাঈল ছেলের নাম রাখলেন মুহাম্মদ। মানে প্রশংসিত। সত্যিই এই ছেলেটি এমন কিছু কাজ করছে যার মুসলিম উম্মাহ স্মরণ করবে আজীবন। মুহাম্মদ যখন ছোট তখন মারা যান তার পিতা ইসমাইল। অবশ্যই ইসমাঈল মারা যাওয়াতে তেমন কোন অসুবিধা হয়নি। কারণ ইসমাঈল ছিলেন প্রচুর ধন সম্পদের মালিক।

কিন্তু সমস্যা হয়েছে অন্য রকম। মা দেখলেন তার আদরের নয়নমনির নয়নের আলো নেই। কি এক রোগের কারনে মুহাম্মদ এর চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। মা অজোর ধারায় শুধু মহান আল্লাহর দরবারে পুত্রের জন্য কান্না কাটি করেন। আর আল্লাহ তার বান্দার ডাকে সব সময় সাড়া দেন। একদিন আল্লাহ স্বপ্নে জানিয়ে দিলেন যে তোমার ছেলের চোখ ভালো হয়ে গেছ। সত্যি সকালে ঞুম থেকে উঠে দেখা যায় যে মুহাম্মদ এর চোখ ভালো হয়ে গেছে।

মাত্র ছয় বছর বয়সে এই ছেলেটি পবিত্র কোরআনের ত্রিশটি পার মুখস্থ করে ফেলেন। আর দশ বছর বয়সে শেষ করেন প্রাথমিক শিক্ষা।

দশ বছর বয়সে ভর্তি হন তৎকালীন বোখরার বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম দাখিলী এর হাদিস শিক্ষা কেন্দ্রে। কিন্তু কি আশ্চার্য। অন্য ছাত্ররা যেখানে প্রতিদিন খাতা কলম নিয়ে সেখানে মুহাম্মদ আসতো খালি হাতে। কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর সকলে ভৎসনা করতে লাগলো যে, তুমি খাতা কলম না এনে শুধু শুধু সময় নষ্ট করছো কেন? যদি পড়া লেখায় মন না থাকে তবে এসে কি লাভ। মুহাম্মদ তখন বলিল, ঠিক আছে আগামী কাল তোমার তোমাদের লিখিত সকল খাতাপত্র নিয়ে আসবে আমি মুখস্থ সব হাদিস বলে দেব। আমার ভূল হয় কি না দেখে নিও। পরদিন সকল ছাত্র তাদের খাতাপত্র নিয়ে আসলে দেখা যায় যে, মুহাম্মদ এর মুখস্থ হাদিসের একটি হাদিস তো ভুল নেই। আর তা এমন ধারাবাহিক ভাবে বর্ণনা করলেন যে ঠিক যেভাবে ওস্তাদ শিক্ষা দিয়েছেন। ছাত্ররা তো অবাক। তারপর চারদিকে ছড়িয়ে গেলো তার জ্ঞানের কথা।
মাত্র ষোল বছর বয়সেই বোখরার সকল মুহাদ্দিস এর সংকলিত হাদিস মুখস্থ করে ফেললেন। এ তালিকায় আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক, ওয়াকী ইবনুল জারয়াহ এর সংকলিত হদিসও ছিল। তারপর মা এবং অপর ভাই আহাম্মদসহ পবিত্র হজ্ব পালনে মক্কা গমন করেন।
মক্কায় তিনি সেখানকার বিভিন্ন মুহাদ্দিসগনের কাছ থেকেও হাদিস শিক্ষা গ্রহণ করতে থাকেন। এসময় তিনি তার প্রথম গ্রন্থ কাদায়াস সাহাব ওয়াত তাবিঈ নামক গ্রন্থটি রচনা করেন। তারপর রাতের চাঁদের আলোয় বসে লিখেন আরেক গ্রন্থ তারিখে করিব। আর বিখ্যাত জামি সহীহ বোখারী শরীফ(যাহা বোখারী শরীফ নামে সারা দুনিয়ায় পরিচিত)লিখা আরাম্ভ করেন মক্কায় মসজিদে হারাম এ। এবং এই গ্রন্থ লিখে শেষ করতে প্রয় ষোল বছর সময় নেন।

মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বোখারী নামক এই মানুষটি এক হাজারেরও বেশী মুহাদ্দিস থেকে হাদিস শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং নব্বই হাজারেরও বেশি লোককে হাদিস শোনান। তিনি এক লক্ষ সহীহ হাদিস ও দুই লক্ষ গায়রে সহীহ হাদিস মুখস্থ করেন এবং তিন লক্ষ হাদিস সংগ্রহ করেন। অর্থ্যাৎ ছয় লক্ষ হাদিস উনার আয়ত্বে ছিল। এর এই চয় লক্ষ হাদিস থেকে যাচাই বাছাই করে সাত হাজার দুইশ পঁচাত্তরটি (কোন কোন গননায় কম বেশী)হাদিস তিনি তার বিখ্যাত জামি সহীহ বোখারী শরীফ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। এই মহান ব্যক্তি প্রতিটি হাদিস লিপিবদ্ধ করার পূর্বে গোসল করে দুই রকাত নাফল নামাজ পড়ে নিতেন।

তিনি এমন ছিলেন যে, এত ধন সম্পদের মালিক হয়েও সাদাসিদে জীবন যাপন করতেন। কোন কোন সময় মাত্র দুই তিনটা বাদাম খেয়ে দিন কাটিয়ে দিতেন। অনেক দিন তরকারী ছাড়া শুকনো রুটি খেয়ে দিন কাটিয়ে দিতেন ফলে তাঁর অসুখ হয়ে গিয়েছিল।

আর আমলের কথা নাইবা লিখলাম। তিনি এমন ভাবে ধ্যন মগ্ন হয়ে নামাজ পড়তেন যে একবার একটি বিচ্চু তাকে ষোল সতেরবার কামড় দিয়েছিল কিন্তু তিনি নামাজ ছাড়েন নি।। তিনি রমজান মাসে তরাবিতে এক খতম, দিনে এক খতন আর তিন রাতে মিলে এক খতম কোরআন পড়তেন।

তৎকালীন বোখরার শাসনকর্তা তার দুই ছেলেকে তার দরবারে গিয়ে পড়াবার কথা বললে তিনি আশংকা করেন যে এতে হাদিসের অবমূল্যায়ন হবে তাই তিনি পড়াতে অস্বীকার করেন। এতে কুচক্রীমহল ষড়যন্ত্র করে এই মহান ব্যক্তিকে বোখরা থেকে বের করে দেন।

২৫৬ হিজরীর মাওয়াল মাসের এক তারিখ শনিবার ঈদুল ফিতরের দিন দুনিয়া থেকে বিদায় নেয় বিখ্যাত বোখারী শরীফের রচিয়তা মাওলানা মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল ইবনে ইব্রাহীম ইবনে মুগীরা ইবনে বারদিযবাহ আল যুফি আল বোখারী (রহঃ)। যার উপনাম ছিল আবু আবদুল্লাহ।

হযরত ইমাম বোখারী (রঃ) 'র ওফাতের ঘটনাঃ ইমাম বোখারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি'র ইন্তেকালের পরে নামাজে জানাযা আদায় করে যখন তাঁর লাশ মোবারক রাখা হয় , তখন কবর মিশক আম্বরের সুগন্ধিতে ভরপুর হয়ে যায় । এই দৃশ্য দেখে লোকজন দীর্ঘ দিন যাবৎ তাঁর কবরে আসা- যাওয়া করতে থাকে এবং তাঁর কবর থেকে মাটি হাতে নিয়ে ঘ্রাণ টেনে আশ্চর্য বোধ করে । একদা একজন ব্যক্তি বর্ণনা করেন যে , আমি স্বপ্নে দেখলাম , ছরকারে দো'জাহা (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সাহাবীদের কে নিয়ে ইমাম বোখারী (রাহমাতুল্লাহিআলাইহি) এর কবরের স্থানে হাজির হলেন । আমি তাদের সামনে গিয়ে সালাম পেশ করলাম । হুজুর করিম (দঃ) আমার সালামের জাওয়াব দেন । আমি আরজ করলাম ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আপনি এখানে কি জন্য এসেছেন ? ছরকারে দো'জাহা (দঃ) এরশাদ করলেন-আমি এখানে ইমামুল মুহাদ্দিসীন ইমাম বোখারীর জন্য অপেক্ষায় রয়েছি । (অর্থাৎ ইমাম বোখারী আজ ইন্তেকাল করেছেন তাই আমি তার সম্মানার্থে এখানে দাঁড়িয়েছি) । বর্ণনাকারী বলেন- এই স্বপ্ন দেখার কিছুদিন পরে আমি খোঁজ নিয়ে দেখলাম ঐ দিনই ইমাম বোখারী (রঃ) ইন্তেকাল করেছেন ।

মৃত্যুর পর তার কবর থেকে সুগনধ বের হচ্ছিল। লোকেরা অনেক চেষ্টা করেও এই সুগন্ধ বন্ধ করতে পারছিল না। মানুষজন তার কবরের মাটি নিয়ে যাচ্ছে। সে সময় সেখানকার এক আল্লাহর ওলী দোয়া করেন যেন তার কবর থেকে সুগন্ধ বের না হয়। তারপর কবর থেকে সুগন্ধ বের হওয়া বন্ধ হয়।

No comments

Leave a comment to inspire us.

Powered by Blogger.