উত্তর গোলার্ধে যখন শীতকাল, দক্ষিণ গোলার্ধে তখন গ্রীষ্মকাল
পৃথিবীর ঋতু পরিবর্তনের ব্যাপারটি বেশ মজার। উত্তর গোলার্ধ যখন শীতে কাঁপছে দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকার স্টেডিয়ামগুলোয় দর্শকরা তখন গ্রীষ্মের ঢিলেঢালা পোশাক পরে হাজির হচ্ছেন।
শীতকালটা কেন ঠাণ্ডা এর উত্তরে অনেকে বলে দেন, এ সময়টা সূর্য পৃথিবী থেকে দূরে চলে যায়। বিষয়টি আসলে অন্যরকম।
পৃথিবী ঠিক বৃত্তাকার পথে সূর্যের চারিদিকে ঘোরে না, একটি উপবৃত্তাকার পথে আবর্তন করে। ফলে পৃথিবী কখনো সূর্যের কিছুটা কাছে আর কখনো কিছুটা দূরে অবস্থান করে। কিন্তু দূরত্বের এই পরিবর্তন পৃথিবীর ঋতু পরিবর্তনে তেমন একটা প্রভাব ফেলে না।
পৃথিবীর ঋতু পরিবর্তনের প্রধান কারণ নিজ অক্ষের ওপর হেলে থাকা। পৃথিবী নিজ অক্ষের ওপর ঠিক খাড়াভাবে না থেকে ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে থাকে। এই হেলে থাকাটাই ঋতু পরিবর্তন ঘটায়।
পৃথিবী হেলে থাকায় কখনো উত্তর মেরু সূর্যের দিকে হেলে থাকে আর কখনো দক্ষিণ মেরু সূর্যের দিকে হেলে থাকে।
পৃথিবীর যে অংশটি সূর্যের দিকে হেলে থাকে সে অংশের আকাশে সূর্য খাড়াভাবে আলো দেয়, ফলে সূর্যের আলোর তেজ বেশি হয় সেইসাথে দিনটাও দীর্ঘ হয়। ফলে বেশি সময় ধরে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয় এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। আবার এ সময়টায় রাত সংক্ষিপ্ত হওয়ায় ভূপৃষ্ঠ ঠাণ্ডা হওয়ার জন্যও বেশি সময় পায় না। যার ফল গ্রীষ্ম।
এই হেলে থাকার কারণেই ২১ জুন উত্তর গোলার্ধে দিন সবচেয়ে দীর্ঘ হয়। তাই ২১শে জুন এর আগের এবং পরের দেড় মাস উত্তর গোলার্ধের জন্য গ্রীষ্মকাল। ঠিক একই সময়ে দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের বিপরীত দিকে হেলে থাকার কারণে সেখানে দিন সংক্ষিপ্ত হয়, রাত দীর্ঘ হয়। সূর্যের আলো কম সময় পাওয়া এবং খাড়া সূর্যালোক না পাওয়ার কারণে দক্ষিণ গোলার্ধে তখন শীতকাল।
২২শে ডিসেম্বর ঘটে বিপরীত ঘটনা। এসময় দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে হেলে থাকে, সেখানে তখন গ্রীষ্মকাল আর কম সূর্যের আলো পাওয়ার কারণে উত্তর গোলার্ধে তখন শীতকাল।
সৌরজগতের আরেক গ্রহ বুধ নিজ অক্ষের ওপর প্রায় লম্বভাবে থাকার কারণে সেখানে পৃথিবীর মত ঋতু পরিবর্তন ঘটে না।
No comments
Leave a comment to inspire us.